ভিডিও এডিটিং- নামের মধ্য দিয়েই বুঝা যায় এর মাধ্যমে ভিডিও এডিট করা হয়।

ক্যামেরায় ধারণকৃত কোনো ভিডিও ফুটেজকে পছন্দ অনুযায়ী সৃজনশীলভাবে সাজিয়ে একটি পরিপূর্ণ গল্পের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলার কাজকেই বলা হয় ভিডিও এডিটিং।

আমরা জানি কোনোকিছুকে তার প্রকৃত রূপ থেকে কিছুটা পরিমার্জিত করে সুন্দরভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন করাই হলো এডিটিং; আর ভিডিও এডিটিং এ ভিডিওর টাইটেল, গ্রাফিক্স, কালার কারেকশন, সাউন্ড মিক্সিং, ইফেক্ট সহ সব ধরণের কাজ করা হয়।

আর তা অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু সফটওয়্যারের মাধ্যমে-

কম্পিউটারের জন্য জনপ্রিয় সফটওয়্যারগুলো হলোঃ

  • Adobe Premiere Pro
  • Adobe After Effects
  • Camtasia
  • Filmora
  • Final cut pro
  • sony vegas pro

আর মোবাইলের জন্য জনপ্রিয় সফটওয়্যারগুলো হলোঃ

এখন প্রশ্ন হলো ভিডিও এডিটিং এর প্রয়োজন কেন?

আমরা যখন একটি ভিডিও ধারণ করি, দেখা যায় ফুটেজে অপ্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড থাকে, থাকে অপ্রয়োজনীয় ক্লিপ। এছাড়া ভিডিও থিম বা গল্পের প্রয়োজনে কিছু ছবি বা ভিডিও ফুটেজের সংযোজন করতে হয়, ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড সংশোধন করতে হয়, সংযোজন করতে হয় টেক্সট। এসব কাজের ফলেই একটি ভিডিও দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে-  আর এজন্যই প্রয়োজন ভিডিও এডিটিং।

ভিডিও এডিটিং কোথায় কাজে লাগে?

আগে বলুন, কোথায় ভিডিও এডিটিং এর প্রয়োজন নেই?

ইউটিউব ও ফেসবুকে টিউটোরিয়াল, বিভিন্ন ধরণের Vlog, নাটক, সিনেমা, সিনেমাটোগ্রাফি, ডকুমেন্টারি – কীসে নেই ভিডিও এডিটিং? ই-কমার্সের যুগে ভিডিও হয়ে উঠেছে পণ্য প্রচারের অন্যতম মাধ্যম। কারণ পণ্যের ছবির চেয়ে ক্রেতারা ভিডিওর প্রতিই বেশি আগ্রহবোধ করেন। আপনি যে থিম বা উদ্দেশ্যে ভিডিও বানান না কেন, সেটি তখনই দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, যখন সেই ভিডিওকে আপনি সুন্দরভাবে পরিমার্জিত রূপে উপস্থাপন করবেন।

তাই ভিডিও এডিটিং কে ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়ার চিন্তা করলে খুব একটা ভুল করবেন না আপনি।

ভিডিও এডিটিং এ কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হয়?

ফুটেজ এডিটের মাধ্যমে গল্পকে সাজিয়ে তোলাঃ

সাধারণত ভিডিও ধারণের সময় যে ফুটেজ নেয়া হয়ে থাকে, তাতে নির্দিষ্ট গল্প ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়না। ফুটেজকে সংশোধন, পরিমার্জিতভাবে সাজিয়ে কাহিনী উপস্থাপন করা হয়, যাতে তা দর্শকের বোধগম্য হয়।

অপ্রয়োজনীয় ফুটেজ বা ক্লিপ বাদ দেয়াঃ

ভিডিও ধারণের সময় অপ্রয়োজনীয় ক্লিপ এসে যায় যেগুলো বাদ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে আর এটি ভিডিও এডিটিং এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রয়োজনীয় ও উন্নত ফুটেজঃ

ভিডিও ধারণের পর সতর্কতার সাথে ভালো মানের প্রয়োজনীয় ফুটেজ বাছাই করতে হবে। ফুটেজ নির্বাচনের পর গল্প অনুসারে সেগুলোকে সঠিক সিক্যুয়েন্সে সাজিয়ে মানানসই Transition, ফন্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে এডিটের কাজ করতে হবে।

গ্রাফিক্স ও মিউজিকঃ

গ্রাফিক্স ও মিউজিক কে বলা যায় ভিডিও এর প্রাণ- কেননা এই দুইটি জিনিস ভিডিওতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করে তা দর্শকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। তবে এই দুইটির সংযোজনের সময় গল্পের দিকে খেয়াল রাখা জরুরী- গল্পের সাথে খাপ খায় এমন উপাদানই ব্যবহার করতে হবে। নতুবা ভিডিও আকর্ষণীয় হওয়ার বদলে দৃষ্টিকটু হবে।

সাউন্ড ইফেক্ট ও ভিজুয়্যাল ইফেক্টঃ

ফুটেজে কি ধরণের ইফেক্ট ব্যবহার করা উচিত তা একজন ভালো ভিডিও এডিটর সেই সর্ম্পকে জানেন এবং বোঝেন। ভিডিওকে আরও বেশি প্রানবন্ত এবং আকর্ষনীয় করে তুলতে ভিডিওর সঙ্গে সাউন্ড ইফেক্ট এবং বিভিন্ন ভিজুয়াল ইফেক্ট ব্যবহার করতে হয়।

ক্যারিয়ার হিসেবে ভিডিও এডিটিং

আগেই বলেছি – “ কোথায় নেই ভিডিও এডিটিং?” মার্কেটিং বলুন কিংবা পারসোনাল ব্লগ বা ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ওয়েবসাইট- প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজন ভিডিও এডিটিং এর। তাই বলা যায়, অনলাইন বা অফলাইনে ক্যারিয়ার হিসেবে ভিডিও এডিটিং অবশ্যই সময়োপযোগী পছন্দ।

ফ্রিল্যান্সিং এর দুনিয়ায় ভিডিও এডিটরের রয়েছে প্রচুর চাহিদা। তবে ভিডিও এডিটিং এর কাজগুলো সাধারণত বড় ও দীর্ঘমেয়াদীসম্পন্ন প্রজেক্ট হওয়ার কারণে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কোনো কোম্পানি আপনার থেকে একবার পছন্দনীয় ও মানসম্মত কাজ পেলে, তারা আপনাকে কনট্র্যাক্ট বেসিসে কোম্পানির জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভিডিও এডিটর হিসেবে নিয়োগ দিবে।

দেশের সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে সংবাদের পাশাপাশি অসংখ্য অনুষ্ঠান, নাটক, ম্যাগাজিন প্রচারিত হয়। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্রযোজনা সংস্থা কিংবা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বেসরকারিভাবে যে অনুষ্ঠান নির্মাণের কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেখানে ভিডিও এডিটিং জানা ছেলেমেয়েরা খুব সহজেই চাকরির সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে।  আমাদের  দেশে ভিজ্যুয়াল মিডিয়া সম্প্রসারণের সঙ্গে বাড়ছে ভিডিও এডিটরদের চাহিদাও।  এছাড়া  ইউটিউব কিংবা ওয়েডিং ফটোগ্রাফির প্রতিষ্ঠানের প্রসারের কারণে সেখানে রয়েছে ভিডিও এডিটরের ব্যাপক চাহিদা। নূন্যতম এইচএসসি পাশের পরেই প্রশিক্ষণ নিয়ে ভিডিও এডিটর হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া যায়।

তবে ভিডিও এডিটরের থাকতে হবে সৃজনশীল মস্তিষ্ক, তাঁকে ভাবতে হবে কীভাবে অন্যদের থেকে আলাদাভাবে নিজ প্রোডাকশনকে উপস্থাপন করা যায়- কারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে ভিডিও এখন সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। দেশ-বিদেশের ট্রেন্ড, দর্শকের চাহিদা ইত্যাদি সম্বন্ধে থাকতে বিস্তর ধারণা। ভিডিও এডিটর হিসেবে আপনি তখনই সফল হবেন যখন নিজের সৃজনশীলতা ও ডিজাইন সেন্স কে প্রকাশ করতে পারবেন আপনার কাজের মাধ্যমে।

Leave a Reply

Login Categories